অনলাইন ডেস্ক : মিয়ানমারের মতো পাসপোর্ট না থাকলেও যাওয়া যাবে ভারতে। এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত কর্তৃপক্ষ। মানবিক কারণে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। মিয়ানমারের সঙ্গে চালু থাকা ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নামে এ পদ্ধতি খুব শিগগিরই ভারতের সঙ্গেও চালু হবে বলে আশাবাদী বিজিবি।
‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ পদ্ধতি চালু হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধসহ ছোটখাট অনেক সমস্যার সমাধান হবে বলেও মনে করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ এর ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আরও আলোচনার বাকি আছে বলে জানিয়েছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ।
বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নামে স্বল্প সময়ের জন্য এপার-ওপারের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা চালু রয়েছে। ২৪ ঘন্টা থেকে ৪৮ ঘন্টা কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময়ের জন্য স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন থেকে ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ নিয়ে দু’দেশের সীমান্ত সংলগ্ন অধিবাসীরা এপার-ওপারের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও ঘোরাফেরা শেষে ফিরে যায় এবং ফিরে আসে। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকা জুড়েই ভারত। তাই ভারতের সঙ্গে এ পদ্ধতি চালু থাকা খুবই জরুরি। বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেই দুই দেশের নীতি নির্ধারকরা এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। খুব শিগগির এ বিষয়টিরও সমাধান হবে বলেও আশাবাদী তারা।
মিয়ানমার সীমান্তের মতো ভারত সীমান্তেও ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ চালু করা যায় কিনা, জানতে চাইলে বিজিবি-র মহাপরিচালক আজিজ আহমেদ বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে যে ধরনের সিস্টেম আছে, সেটা ভারতীয় সীমান্তে চালু করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে। উভয়পক্ষই এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফ-এর ডিজি পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। মিয়ানমারের মতো ২৪ ঘণ্টা কিংবা ৪৮ ঘণ্টার কোনও ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ চালু কিংবা প্রবর্তণ করা যায় কিনা। তবে আবার আলোচনা করে বিষয়টি ফাইনাল করতে হবে।’
আজিজ আহমেদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এক ধরনের। আর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত আরেক ধরনের। মিয়ানমার সীমান্তে একটা ‘শর্ট ট্রাভেল পারমিট’ দেওয়া হয়। যারা ওদিক থেকে এদিকে আসে কিংবা এদিক থেকে ওদিকে যায়, ইমিগ্রেশন থেকে তাদের ২৪ ঘন্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মেয়াদের শট ট্রিপের জন্য একটা অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদন নিয়ে তারা কক্সবাজার কিংবা আশে-পাশের এলাকায় ঘুরে ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যায়। কতজন আসল আর গেলো আমরা শুধু সেটা তদারকি করি। এ পদ্ধতিটা বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের আছে। আমাদের লোকজনও যখন মংডু বা ওইসব এলাকাতে যায়, তারা সেখানে গেলে একটা স্বল্প সময়ের জন্য ভিজিট পারমিট পায়। কাজ শেষে আবার সেটা জমা দিয়ে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসে। এটা প্রতিদিনই হচ্ছে ওই সীমান্তে। তারমধ্যে দু’চারজন এদিক সেদিক থেকে যাওয়ার চেষ্টা করে। তখন আমরা তাদের ধরে মামলা করে পুশ ব্যাকের চেষ্টা করি।’
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই ব্যবস্থাটা নেই। সেজন্য আমাদের সেখানে ভিসা নিয়ে যেতে হয়। কেউ ভিসা ছাড়া ওইপাড়ে গেলে সেটা হবে অবৈধ। তখন যে দেশের নাগরিকই হোক না কেন, ওই দেশের প্রচলিত আইনে কিন্তু সে অপরাধী। তাকে তারা অ্যারেস্ট করতে পারবে। বৈধ ভিসা ছাড়া আমাদের দেশে আসলেও আমরা তাকে অ্যারেস্ট করে পুলিশে দিতে পারব।’
এটিকে মানবিক বিষয় উল্লেখ করে আজিজ আহমেদ জানান, গত প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ভারতীয় পক্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের এ নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সীমান্তটা এতো জটিল যে, দেখা গেলো একইবাড়ির মধ্যে বোনের ঘরটা পড়েছে ভারতে, ভাইয়ের ঘরটা পড়েছে বাংলাদেশে। ছোট ভাই থাকে বাংলাদেশে, বড় ভাই ভারতে। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতি কিন্তু আমাদের সীমান্তে আছে। কিন্তু আইন মানতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাহলে তারা জেল খাটবে। তারপর অনেক ভোগান্তি শেষে ছাড়া পাবে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে মানবিক কারণে আমরা উভয়পক্ষ পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে মুচলেকা নিয়ে একে অপরের কাছে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করি। আর যদি অপরাধী হয় তাহলে ভিন্ন কথা। তাকে আইনের হাতেই সোপর্দ করতে হবে।’
বাংলাট্রিবিউন থেকে নেয়া
পাঠকের মতামত: